Saturday 14 March 2020

আনন্দগান বাজে


বৃষ্টির আগমনে ধুলিধুসরিত কলিঙ্গনগরে আজ খানিক স্বস্তির ছোঁয়া, দুরের পাহাড় যেগুলির দৃশ্যমানতা একেবারেই নেই বললেই চলে সেই পাহাড়ের রঙ আজ আকাশের কোলে সতেজ রূপ ধারন করেছে। হ্যাঁ , ঠিক ধরেছেন, এই শিল্পাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমার কাছে বেশ মনোরম লাগে। ভালোলাগে যখন রাত্রির পুরু ধোঁয়ার চাদরের মাঝে কখনো সখনো উজ্জ্বল কালো আকাশে চাঁদ কিংবা মরসুমি কিছু তারা উঁকি দেয়, দুরের থেকে দেখা দেয় শিল্পনগরীর চঞ্চল অবয়ব... কলিঙ্গনগরে কখনো রাত হয়না। কখনো থেমে যায় না তার সদানন্দময় যন্ত্রসঙ্গীত...
আজ সকালে যথারীতি দেরীতে উঠে অফিসের বাস মিস করে ভাবছি, আহা, এমন সুন্দর বৃষ্টিমেদুর সকালে কারুর এক মোটরসাইকেল চেপে আরামে হাওয়া খেতে খেতে যাব...
হঠাৎ facebook notification এল, Spic Macay NIT Durgapur Chapter added a new post... কৌতূহলের নেই শেষ/ সময় বলে আছ বেশ/ দেরি করলে হবে তোমার punch late.... 
তখনকার মত কৌতূহলকে priority না দিয়ে, এগোলাম। আর প্রবল বর্ষণের শব্দে মনে পরে গেল, আজইতো ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে...
ঝম্ঝম্ , কড়কড়, টিপটিপ, সন্ সন্ ইত্যাদি ইত্যাদি শব্দবন্ধের মধ্যে আমি সুর ছন্দ সব শুনতে পাই... মনে হয় আহা এত বর্ষার গান, কত যেন আদর করে সব মলিনতা কে ধুইয়ে দিচ্ছে, নতুন রুপে সেজে উঠছে প্রকৃতি আবারো পরের বর্ষার অপেক্ষায়... এই সব ভাবতে ভাবতে চললাম গাড়ির কাঁচে বৃষ্টির জল জমছে, দূরে দেখা যাচ্ছে আবছায়া পূর্বঘাটের অবয়ব... কত না রাগ রাগিণী মনে পরে গেল, দেশ, মেঘ মল্লার, মেঘ আর কত কি।
এই সব ভালমন্দ সব ভাবতে ভাবতে কখন যে পৌঁছে গেছি গন্তব্যে খেয়াল নেই, হঠাৎ করে সামনে দেখি বিশালাকায় দেহ CRM এর সিংহদুয়ার আমার সামনে... খারাপ হল মন, খনিকের জন্য হয়ত ভাবলামও, কি ভাবছিলাম, আর কোথায় এসে পৌঁছলাম, দুঃখবিলাস করে খুব একটা উপকার হবে না বলেই, সেটা রাতের আলাপের জন্য দূরে সরিয়ে রাখলাম। এখন আমি এক অন্য মানুষ, মাথায় হেলমেট, পায়ে শক্ত জুতো, পুরদস্তুর একজন ইঞ্জিনিয়ার। হেঁটে ঢুকছি, ও মা... পাশ থেকে খুব একটা চেনা সুর শুনতে পাচ্ছি যেন, ভাবলাম কানের ভুল... মেশিন আবার গান গাইতে পারে নাকি? আরও এগোচ্ছি, চমকে পিছনে তাকালাম,... না নেহাত একটা মোটর ই বটে... তাহলে কে যেন একটা পা এর সুর বলল না... সন্দেহ হতেই কাছে গেলাম, নিবিড় ভাবে কান পাতলাম। এবার সত্যি সত্যি শুনতে পেলাম, পা এর সুর টা তাহলে এটাই করছিল। আরও সব রকমের সুর মিলে মিশে এই আলাদা সুর টাকেই শুনতে দিচ্ছিল না তাহলে...
শুরু হল আমার নতুন এক সঙ্গীতময় জীবনের, এতদিন যেগুলো ছিল নেহাত noise, সেটাই আজকের যন্ত্রসঙ্গীত হয়ে ধরা দিল আমার কাছে। কোন কোন কাছের মানুষের আমার কাছে অনেক অভিযোগ, আমি একদম গানের চর্চা করি না বলে, কিন্তু তারা বোঝে না, গানের চর্চা তো আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে, প্রতিটা চিন্তা আমার সুরের ছন্দে চলে, প্রতিটা পদক্ষেপ আমার তালের ছন্দে চলে... সাথে আজ থেকে যুক্ত হল নতুন যন্ত্রসঙ্গীতের এক অধ্যায়। শুনবো, অনুভব করবো, খুঁজতে চেষ্টা করবো তার স্বরলিপি।
প্রতিদিনের মত আজও রাত হবে... যন্ত্রের সাথে সঙ্গীতের কোন শেষ হবে না, প্রকৃতির গানের ও কোন শেষ হবে না... মানব সভ্যতা এগিয়ে চলবে, চলতেই থাকবে... সুর মানুষকে আকৃষ্ট করবে, কর্কশ শব্দ মানুষকে কষ্ট দেবে, চেষ্টা চলুক, কর্কশ শব্দ থকে সুরে রুপান্তরের প্রচেষ্টা, শব্দের তীব্রতা কম করার প্রচেষ্টা।
প্রতিটা মুহূর্ত মানুষের সংগীতময় হয়ে উঠুক, মননশীল হোক মানুষ। আমাদের মত সর্বক্ষণ কর্কশ কলুশের মধ্যে থাকা মানুষের জীবন হয়ে উঠুক সুমিষ্ট ...... জগত জুড়ে উদার সুরে আনন্দগান বেজে উঠুক......
Happy World Music Day...
বিঃ দ্রঃ কলিঙ্গনগরে আসার পর থেকে প্রথম শিল্পাঞ্চল বিষয়ে লেখা...